বুধবারই শপথ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা

একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সিদ্ধান্ত পাল্টেছে, বুধবারই শপথ নিতে সংসদে যাচ্ছেন তাদের নব নির্বাচিত এমপিরা।

মঙ্গলবার রাতে পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আগামীকাল শপথ নেবেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ। পূর্ব ঘোষিত বৃহস্পতিবারের সভা বাতিল করা হয়েছে।

“আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে জাতীয় সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় উপনেতার কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সকল সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।”
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এর আগে বলেছিলেন, বুধবার তারা শপথ নিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেদিন আলোচনা করে শপথের বিষয়টি ঠিক করা হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে। ঢাকায় ফিরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংসদ ভবনে সংসদ উপনেতার চেম্বারে তাদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা তখন বলেছিলেন চুন্নু।
বুধবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একাদশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন এমপিদের শপথ পড়াবেন। পরদিন বৃহস্পতিবার হবে মন্ত্রিসভার শপথ।

সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হয়েছে ২৯৯ আসনে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ফল স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহের একটি আসনের ফলাফল আটকে আছে। ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২২টি জিতে নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।

সংরক্ষিত নারী আসন বাদে একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির আসন ছিল ২৩টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ছিল ২৬৪ আসনে। এর মধ্যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের ছাড় দিয়েছিল। অর্থাৎ, ওই ২৬ আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
কিন্তু বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টক্কর দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া আসনের অর্ধেকেও জয় পায়নি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল। অধিকাংশ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিতরা হলেন- জিএম কাদের (রংপুর-৩), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (পটুয়াখালী-১), মজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৩), হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১), শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ (বগুড়া-২), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), গোলাম কিবরিয়া টিপু (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫) ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩)।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভোটের পরদিন অভিযোগ করেন, “নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছিলাম কিন্তু সরকার আমাদের যে কথা দিয়েছিল, সেই কথা রাখেনি।”

তিনি বলেন, “সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু করেছে।

“আর যেখানে তাদের লোকজনকে জেতাতে চেয়েছে, সেখানে তারা আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে সিল মেরে হারিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।”
এদিকে দলীয়ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ে ছয়গুণ বেশি আসনে স্বতন্ত্ররা জয় পাওয়ায় দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্ররা জোট করে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করলে তাতে বাংলাদেশের আইনে কোনো বাধা নেই। আর সেরকম হলে গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি সেই তকমা হারাতেও পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *