ধূসর ঠিকানা । পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়

মায়ের চোখ এড়িয়ে ছোটবেলায় বাঁশের তৈরী সরু মই বেয়ে তরতর করে দ্রুত
উঠে পড়তাম তেতলার কার্ণিশহীন খোলা ছাদে।
ঐ ছাদ থেকে চারিদিকের চালচিত্র দেখার মজাই ছিল আলাদা।
ছাদ থেকেই সহজ ছিল মেঘ আর রোদের চু কিতকিত, খোখো আর কাবাডির খড়িমাটি ঘর দেখা।
মেঘ ছুটলে আমিও মেঘের পিছু পিছু ছুট লাগাতাম।
পায়ের ধিতিং ধিতিং শব্দে মা চকিত ছুট্টে আসত মইসিঁড়ির পায়ের কাছে।
নীচ থেকেই বকা লাগাতো
_ বাঁদর মেয়ে, আবার উঠেছিস ন্যাড়া ছাদে? পড়ে মরবার ইচ্ছে হয়েছে, নাম্ নাম্ আর কখনো যদি উঠতে দেখি ঠ্যাং ভেঙে রেখে দেব! বাড়িটা ছিল চৌমাথার মোড়ে। পুবের দিক বরাবর হেঁটে গেলেই মস্ত মাঠ। এই মাঠের পোষাকি নাম ছিল “সেবাশিবির ক্লাব”।
এখানেই প্রথম শিখেছিলাম কাঁটা কম্পাস বসিয়ে জ্যামিতিক রোদ বোঝার কৌশল!
কোন রোদ মধুমনি আলোর মতো পবিত্র আর কোন রোদ ট্যারা চোখ মেলে
চুরি করে বুকের সমান্তরাল কুসুমবনী যৌবন!
এখানেই প্রথম চিনতে শিখেছি ভেসে বেড়ানো অসংখ্য মেঘেদের দল থেকে
কি করে তুলে নিতে হয় সত্যিকার মেঘপুরুষ টিকে।
ময়ূরকণা মেঘদের প্রতি আমার অগাধ রূপদৃষ্টি দেখে নয়নদা বলতেন,
“নিজেকে ভাগীরথির মতো ভাসিয়ে দিবিনা মেঘেদের দলে।
তুই যা বোকা,ফাঁদে ফেলতে তোকে দুমিনিটও লাগবে না।
নিজেকে সামলাতে শেখ, বুকের পাঁজরে গচ্ছিত রাখ তোর পদ্ম ফোটা সুগন্ধী পাঁপড়ি।
একদিন তোর রূপমতী যশোধরা নদীতে ছুটে আসবে থরেথরে মেঘেদের দল•••
তুই কেন পিছু ছুটবি ?”
সেইদিনই সাঁঝ ডুডুমের আলোয় সাদাপাতা মেঘগুলোকে শেষবারের মতো দেখে ফিরিয়ে ছিলাম মুখ !
আজ অনেক শীত বসন্ত পেরিয়ে আষাঢ়ের তালিকায় দেখলাম কবিতা লেখার
সাদাপাতা মেঘ স্বর্ণকেতন রোদে কুচিকুচি উড়তে উড়তে নেমে আসছে শ্বশুর
ভিটের ছাদ মাথাতে ধূসর ঠিকানায়।